জেনে নিন মুরগি পালনের সুবিধা গুলো কী কী

প্রিয় দর্শক মুরগি পালনের সুবিধা গুলো কী কী এ সম্পর্কে হয়তো আপনি অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সঠিক তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না। আজকে আমরা এ আর্টিকেলের মাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব যা আপনাকে মুরগি পালনের সুবিধা গুলো কী কী এ বিষয়ে ধারণা দেবে। মুরগি পালনের সুবিধা গুলো কী কী এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে মনোযোগ সহকারে সমস্ত আর্টিকেলটি পড়তে অনুরোধ রইল।




প্রিয় দর্শক এখানে আমরা আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করছি তার মধ্যে মুরগির জাত সম্পর্কে আপনি জানতে পারবেন এবং মুরগি পালনের সুবিধা কী কী পাবেন সেগুলো উল্লেখযোগ্য। এরকম আরো গুলো পেতে সমস্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে দেখুন এবং পড়ুন।

ভূমিকা

বাংলাদেশ এ অধিকাংশ গ্রামের বাড়িতে পশু-পাখি পালন করা হয়। তবে প্রায় সব বাড়িতেই মুরগি পালন করা হয় অন্যান্য পশুর থেকে। তবে মুরগি পালন এর ক্ষেত্রে লাভজনক এর বিষয় টা বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।

মুরগি কতো প্রকার ও কি কি?

মুরগি পালন এর জন্য অবশ্যই মুরগি কত প্রকার রয়েছে এবং তাদের নাম ও জাত জানা জরুরি।

আসিলঃ বিভিন্ন জাতের মুরগির মধ্যে আসিল একটি জাত। এ জাতের মুরগি বিশুদ্ধ প্রকৃতির। এটি চট্টগ্রামের আনয়ারা থানা ও ব্রাক্ষনবাড়িয়া সরাইল থানায় এ জাতের মুরগি পাওয়া যায়। এদের দেহের গঠন বলিষ্ঠ ও দৃঢ়, গলা ও পা দুটো লম্বা। দেহে পালক খুব কম থাকে এবং পালক এর রঙ লাল হয়। এ জাতের মুরগী বেশ বড়ো হয় এবং এরা ভালো লড়ায় করতে পারে। এরা খূব সুস্বাদু হয় এবং প্রাপ্ত বয়স্ক মোরগ বা মুরগীর ওজন হয় ৪-৪.৫ কেজি এবং ৩-৩.৫ কেজি এবং এরা বছর এ ডিম উৎপাদন করে ৬০-৭০ টা

ফাউমিঃ এ জাতের মুরগির উৎপত্তিস্থল হল মিশর এবং বাংলাদেশ এর বিভিন্ন বাড়ীতেই দেখা যায় এমন জাতের মুরগি। এ জাতের মুরগির পালকের কালো ও সাদা ফোটা ফোটা এবং ঘাড়ের পালকের রঙ সাদা।এ মুরগির ডিমের খোসার রঙ সাদা। এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে। 

এ জাতের মুরগী ডিম উৎপাদনকারী জাত হিসেবে পরিচিত এবং এ জাত আমাদের দেশীও আবহাওয়ায় পালনের উপযোগী। এরা বছরে ডিম উৎপাদন করতে পারে ১৫০-২০০ টি এবং প্রাপ্ত বয়স্ক মোরগ বা মুরগীর ওজন হয় ১-১.৮০ কেজি এবং ১-১.৫০ কেজি।
রোড আইল্যান্ড রেডঃ এ জাতের মুরগীর উৎপত্তি আমেরিকার রোড আইল্যান্ড রেড নামক স্থানে। এ জাতের মুরগির পালকের রং লাল এবং পাখনা ও লেজের পালকের মাথায় সাদা দাগ থাকে। গায়ের চামড়া হলদে রং এর হয় এবং ডিমের খোসার রং বাদামি। ডিম ও মাংস উভয় লাভের আশায় এ মুরগি পালন করা হয়। প্রাপ্ত মোরগ ও মুরগির ওজন হয় ৩-৪ কেজি ও ২.৫-৩ কেজি এবং এরা বছরে ডিম উৎপাদন করে ১৫০-২০০ টি।

সোনালীঃ রোড আইল্যান্ড রেড জাতের মুরগি এবং ফাওমি জাতের মুরগির মিলনে এ মুরগি সৃষ্টি হয়। এ জাতের মোরগ ও মুরগির রং আলাদা হয়ে থাকে। মোরগের গায়ের রং সোনালীর মধ্যে কালো, পাখায় সাদা ফোটা ফোটা এবং মুরগির গায়ের রং হলুদ কালো। 

এ জাতের মুরগি মাঝারি আকারেরে এবং ডিমের খোসা ক্রিম রংয়ের। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। ডিম ও মাংস উভয় লাভের আশায় এ মুরগি পালন করা হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক মোরগ ও মুরগির ওজন হয় ২-২.২৫ কেজি এবং ১.৫-২ কেজি। এরা বছরে ডিম উৎপাদন করে ১৫০-২০০ টি।

হোয়াইট লেগহর্ণঃ এ জাতের মুরগির উৎপত্তিস্থল ইটালীর লেগহর্ণ নামক স্থানে। এ জাতের মুরগির পালকের রং এবং কানের লতি সাদা। গায়ের চামড়ার রং হলুদ এবং ডিমের খোসার রং সাদা। প্রাপ্ত বয়স্ক মোরগ ও মুরগির ওজন হয় ২-৩ কেজি এবং ১.৫-২ কেজি এবং এরা বছরে ডিম উৎপাদন করতে পারে ২০০-২৫০ টি। এ জাতের মুরগি ৫/৬ মাস বয়স থেকেই ডিম পাড়া শুরু করে। এ কারণে এ জাতের মুরগি ডিম উৎপাদনের জন্য বেশি পরিচিত জাত।

মুরগি পালনের পদ্ধতি কতো প্রকার?

মুরগি পালন এর জন্য ৩ টি পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে থাকে।

মুক্ত পদ্ধতিঃ এই পদ্ধতিতে মুরগিগুলো খোলা জায়গায় ঘুড়ে বেড়াতে পারে। এই পদ্ধতিতে মুরগি প্রাকৃতিক খাবার খেতে পারে । যেমন: কীটপতঙ্গ,ঘাস ইত্যাদি। এর জন্য এই মুরগি পালনে খরচ কম হয়। আবার মুরগির মাংস ও ডিম সুস্বাদু হয়। তবে এই পদ্ধতিতে রোগ নির্ণয় করা কঠিন হয় ও শিকারীর হাত থেকে রক্ষা করা কঠিন হয়, আবার ডিমের উৎপাদন ও কম হয়।

অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতিঃ এই পদ্ধতি মুক্ত ও আবদ্ধ পদ্ধতির সংমিশ্রণে নেওয়া। এই পদ্ধতিতে মুরগিগুলো কিছু সময় খোলা জায়গায় ঘুড়ে বেড়াতে পারে এবং কিছু সময় খাঁচায় থাকে। খাঁচার চারপাশ বেড়া দেওয়া থাকে যানো মুরগিগুলো কোথায় চলে না যায় এবং খাঁচার ভেতরে মুরগিগুলোর জন্য খাবার ও পানি দেওয়া থাকে। এতে খাদ্য কম নষ্ট হয় এবং রোগের ঝুকি কম থাকে। তবে এই পদ্ধতিতে মুক্ত পদ্ধতির তুলনায় মাংস ও ডিম কম পুষ্টিকর হয়।
আবদ্ধ পদ্ধতিঃ এই পদ্ধতিতে মুরগিগুলো সবসময় খাঁচার মধ্যে থাকে। খাঁচার ভেতরে খাবার, পানি ও আলোর ব্যবস্থা করা হয় এবং তাপমাত্রা অতিরিক্ত হলে তাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়। এই পদ্ধতিতে মুরগি পালনের সবচেয়ে বেশি সুবিধা হলো এতে রোগের ঝুকি সবচেয়ে কম এবং মুরগির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কিন্তু, এই পদ্ধতিতে মুরগি পারনে খরচ বেশি হয় এবং মাংস ও ডিম কম পুষ্টিকর হয়।


মুরগি কিভাবে পালন করা উচিত?

মুরগি পালনের ৩টি পদ্ধতির মধ্যে কোন পদ্ধতিটি সবচেয়ে ভালো তা নির্ভর করে উদ্দেশ্য, খরচের পরিমাণ, জায়গা, পরিবেশ ইত্যাদির উপর। তবে আমরা যেহেতু লাভের আশায় বা মুনাফা লাভের আশায় মুরগি পালন করব তাই অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতিটি গ্রহণ করা সঠিক হবে। আবার মুরগি পালনের সুবিধা গুলো কী কী তাও জানা জরুরি।

কারণ এতে মুরগিগুলো কিছু সময় স্বাধীনভাবে ঘুড়াফেরা করতে পারবে যার ফলে মুরগিগুলোর উপর মানসিক চাপ কম পড়বে। খাদ্য কম নষ্ট হবে যেহেতু তারা স্বাধীন অবস্থায় কীটপতঙ্গ ও ঘাস খায়। শিকারীর হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। আবার এই পদ্ধতিতে খরচও কম পড়বে।

কোন জাতের মুরগি পালন বেশি লাভজনক হবে?

মুরগি পালনের জন্য খরচ অনেক কম করতে হয়। তবে জানতে হবে কোন জাতের মুরগি পালনে কি লাভ হবে। যদি আপনি ডিমের ব্যবসা করতে চান তাহলে -

ফিউমিঃ এ জাতের মুরগির ডিম সাদা রংয়ের হয় এবং এরা বছরে ১৫০-২০০ টা করে ডিম উৎপাদনে সক্ষম। এ জাতের মুরগির একটি ডিমের দাম ২৪ টাকা করে।

রোড আইল্যান্ড রেডঃ এ জাতের মুরগি ডিম লাভের আশায় পালন করা হয়। এদের ডিমের রং বাদামি। বছরে এরা ডিম উৎপাদন করতে পারে ১৫০-২০০ টি।

সোনালীঃ এ জাতের মুরগিও ডিম উৎপাদনকারী জাত হিসেবে পরিচিত। আমাদের দেশীয় আবহাওয়ায় এ জাতের মুরগি পালনের উপযোগী বলে এ মুরগি বেশী পালন করা হয়। এদের ডিমের রং ক্রিম কালাররে। বছরে এরা ডিম উৎপাদন করে ১৫০-২০০ টি।

হোয়াইট লেগহর্ণঃ ডিম উৎপাদনকারী জাত হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত জাত। কারণ এরা বছরে ডিম উৎপাদন করতে পারে ২০০-২৫০ টি। এবং এদের ডিমের রং সাদা।

মাংসের ব্যবসা করতে চাইলে-

হোয়াইট লেগহর্ণঃ মাংস ও ডিম উভয় লাভের আশায় এই মুরগি পালন করা হয়। অনেক দ্রুত এ মুরগির বৃদ্ধি হয়। যারা এই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছেন তারা বলেন, ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে ২-৩ কেজি ওজন বৃদ্ধি করে ফেলে এ জাতের মুরগি। বাংলাদেশে এ জাতের মুরগি বেশি খায়।

সোনালীঃ যেহেতু দেশেই উৎপাদন হয় এই মুরগির তাই মাংস বেশ পরিচিত। এ জাতের মুরগি প্রায় ৪-৫ মাসের মধ্যে ১.৫-২ কজি বৃদ্ধি করে ফেলে। এ মুরগি বেশি পরিচিত তার সুস্বাদু মাংসের জন্য।

মুরগি পালনের সুবিধা গুলো কি কি?

বাংলাদেশে গ্রামবাংলার মহিলারা মুরগি পালন করে আসছে যুগ ‍যুগ থেকে। তাদের আয়ের উৎস হিসেবে মুরগি পালন করে থাকে। বর্তমানে দেশে মুরগি পালন ব্যবসায় রূপ নিয়েছে। কারণ মুরগি পালনে রয়েছে অনেক সুবিধা। যেমন বেকারত্ব। বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি। এই বেকারত্ব দূর করতে স্বল্প পূজি দিয়ে মুরগির ব্যবসায় করতে পারে। 
এই মুরগি পালনে বা ব্যবসায় আত্ন-কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় বেকার যুবকদের, গ্রামীণ মহিলাদের। অনেকে বড় করে মুরগির খামার দেই যার মাধ্যমে কর্মচারির প্রয়োজন হয়। এতে অনেক বেকার যুবক কাজ করার স্থান পায়। দেশে বেকারের এর সংখ্যা কমে। প্রাণিজ আমিষের উৎস তৈরি। হাঁস-মুরগি ও ডিম প্রাণিজ আমিষের উৎস। এগুলার মধ্যমে আমিষের অভাব পূরণ করা যায়।

মুরগি পালন করা কতটা কঠিন?

বিশ্বে কোনোকিছুই সহজে পাওয়া যায় না। এর জন্য কষ্ট বা পরিশ্রম করতে হয়। মুরগি পালন করা যেমন বেশি কষ্টের নয় তেমনি অতো সহজ নয়। এক্ষেত্রে, পরিশ্রম কমানোর জন্য মুরগি পালনের সঠিক নিয়মাবলি জানতে হবে।এতে ব্যবসায় লাভ হবে এবং পরিশ্রম কম হবে। মুরগির কাজ মূলত খাওয়া, মলত্যাগ করা ও ঘুরেবেরা। এজন্য মুরগির খাচাঁটি এমন ভাবে স্থাপন করতে হবে যানো এইসব কাজ করতে অসুবিধা না হয়। 

তাদের কয়েকদিন সময়মত খাচায় ডুকাবেন এতে তাদের অভ্যাস হয়ে যাবে কখন তাদেরকে খাচাঁয় ফেরত আসতে হবে। এবং এই অভ্যাস এর ফলে আপনাকে বেশি কষ্ট করতে হবে না। খাচাঁটি এমন ভাবে প্রস্তুত করবেন যানো আপনার খাচাঁর ভেতর প্রবেশ করতে সমস্যা না হয়। প্রতিদিন অন্তত একবার খাচাঁর ভেতরের পানি ও খাবার পরিবর্তন করবেন।


লেখক এর মন্তব্য

মুরগি পালনের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই লাভের ব্যাপারটি মাথায় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন মুরগি পালনের সময় কেমন খরচ হচ্ছে এবং মুরগি বিক্রি করে বা মুরগির ডিম বিক্রি করে কেমন লাভ হচ্ছে। অর্থাৎ খরচ এবং লাভের মধ্যে ব্যবধানটা মাথায় রাখবেন।

আমার এ আর্টিকেলটি যদি আপনার উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। সবাই ভাল থাকবেন এবং দোয়া রাখবেন। নিয়মিত আমার ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন যদি আমার আর্টিকেলগুলো আপনার পছন্দ হয়ে থাকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url