সঠিক পদ্ধতিতে পটল চাষ করার উপায়
প্রিয় দর্শক সঠিক পদ্ধতিতে পটল চাষ করার উপায় সম্পর্কে হয়তো আপনি অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সঠিক তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না। আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। সঠিক পদ্ধতিতে পটল চাষ করার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আপনাকে মনোযোগ সহকারে সমস্ত আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো।
প্রিয় দর্শক এখানে আমরা আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করছি তার মধ্যে পটল চাষের উপযুক্ত সময় এবং পটলের ফলন বৃদ্ধির উপায় উল্লেখযোগ্য। এরকম আরো ইম্পোর্টেন্ট তথ্যগুলো পেতে সমস্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
পটল এমন একটি সবজি যেটি ভারতের পূর্বাঞ্চলে বিশেষ করে ওড়িশা পশ্চিমবঙ্গ আসাম বিহার উত্তরপ্রদেশ এবং বাংলাদেশে ভালো চাষ করা হয় এবং এর উৎপাদন ও ভালো।এই আর্টিকেলটিতে আমরা জানব পটল চাষের উপযুক্ত সময় সম্পর্কে কারণ প্রত্যেকটি ফসলেরই উপযুক্ত সময় থাকে যখন ফসলটি উৎপাদন করা হয় এবং এর চাহিদা বেশি থাকে।আধুনিক যুগে সবই সম্ভব তবে পটল চাষ পদ্ধতিও এখন সম্ভব। কিভাবে পটলের ফলন বৃদ্ধি করব এবং এর ফলে তা থেকে লাভ পাব তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পটল চাষের উপযুক্ত সময়
বাংলাদেশের সব সবজির কি চাষ হয়। তার মধ্যে আলু বেগুন পটল এগুলোই মানুষের চাহিদা বেশি। সেহেতু পটল ব্যতিক্রম নয়। পটল হলো একটি গ্রীষ্মকালীন সবজি। পটলের উৎপাদন থেকেও অধিক এবং এর প্রাপ্তি ও অনেক দীর্ঘ। এই সবজিতে চাষ করা হয় ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর অব্দি। বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে বা বর্ষাকালে যখন তখনই পটল মানুষের গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা পূরণ করে যা সব সবজির চাহিদা প্রায় বিশ শতাংশ পূরণ করে ফেলে।
পটলের চারা কোথায় পাওয়া যায়
সাধারণত সব ধরনের ছাড়াই নার্সারিতে পাওয়া যায়। পটলের চারা ডিও চেক করে নার্সারিতে পাওয়া যাবে। তবে এই চারটি আপনাকে কালেক্ট করতে হবে ফেব্রুয়ারি মাসের একদম শুরুর দিকে এবং চারাটি ভালো দেখে নিতে হবে। অনেক সময় অনেক নার্সারিতে পটলের বীজও পাওয়া যায় এক্ষেত্রে যদি আপনি মনে করেন যে আপনি আপনার নিজেই নিজের বাসায় বা আপনার জমিতে বীজ থেকে আপনি চারা উৎপাদন করবেন তাহলে সেটাও একটা ভালো পদ্ধতি।
পটলের জাত কি কি
প্রত্যেকটি সবজি বা ফসলেরই বিভিন্ন জাত থাকে। পটলেরও তিনটি জাত রয়েছে। জাতের নামগুলো হলো বারি পটল-১, বারি পটল-২, বারি হাইব্রিড পটল-১।নিম্নে আলোচনা করা হলো।
বারি পটল-১ঃ
এই পটলটির ফলনশীল উচ্চ জাতের। ফলের আকার মাঝারি এবং ফলের রং সবুজ গায়ে দশটি থেকে ১০-১১ সাদা ডোরা থাকে। ফলটির দৈর্ঘ্য ১২ থেকে ১৩ সেন্টিমিটার। প্রায় প্রতিটি ফলের ওজন ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম। হেক্টর প্রতি ফলন হয় ৩০ থেকে ৪০ টন। অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এই ফসল টির চারা উৎপাদন করা হয়। এবং অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসের গাছ লাগিয়ে দিলে ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে ফলটি সংগ্রহ করা যায়। এই ফল ৯০ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করা যায়।
বারি পটল-২ঃ
এই পটলটির আকার ও বড় সূচালো। এবং ফলের আকৃতি সিলিন্ডার এর মত। এই ফলের রং হালকা সবুজ ১০ থেকে ১১ টি সাদা রং ডোরা দিয়ে আবৃত। ফলটি ১০ থেকে ১১ সে.মি. লম্বা হয়। প্রতিটি ফলের ওজন 50 থেকে 55 গ্রাম। প্রায় প্রতিটি কাছে সর্বোচ্চ ফল ধরে ২৪০ টি। প্রতি হেক্টর ফলন হয় ৩০ জন মতো। অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত চারা উৎপাদন করা হয়। এবং চারা লাগাবার 95 দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা হয়।
বারি হাইব্রিড পটল-১ঃ
এই পটলের যাতো বারি পটল-১ এর মত উচ্চ ফলনশীল জাত। এই পটরের রং গারো সবুজ এবং সাদা ডোরাযুক্ত। ফলের দৈর্ঘ্য সাধারণত ১৩ থেকে ১৪ সে.মি.।প্রতিটি ফলের ওজন ৬৫ গ্রাম হয়ে থাকে। প্রায় গবেষণায় দেখা গেছে ফলের সংখ্যা হয়ে থাকে ১১২ থেকে ১১৬টির মধ্যে। প্রতি হেক্টর ফলন হয়ে থাকে ১০ থেকে ৪০ টন।
অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে এই ফসলের চারা উৎপাদন করা হয়। দেখা যায় অক্টোবর নভেম্বর মাসে লাগানো গাছ থেকে ফেব্রুয়ারি মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে ফসল সংগ্রহ করা যায়। আবার যদি ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে তাহলে মেয়ে বা জুন মাসে ফলটি পাওয়া যায়।
পটল চাষ পদ্ধতি
পটল চাষ করতে হলে প্রথমে মাথায় রাখতে হবে পটল চাষে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তাপমাত্রা ও সূর্যের। বাংলাদেশে পটল চাষ হয়ে থাকে অক্টোবর থেকে নভেম্বর বা ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। পটল চাষের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে তবে বেদ চাষ পদ্ধতিতে পটল চাষ করলে বর্ষাকালে ক্ষেত নষ্ট হওয়া থেকে মুক্তি পাবে এবং উৎপাদনও ভালো হবে।পটল চাষের জন্য বেলে দো-আঁশ বা দো-আঁশ মাটি উপযোগী। পানি নিষ্কাশনের এমন জমি নির্বাচন করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ উন্নতমানের বেগুন চাষের পদ্ধতি ও পরিচর্যা
পটল চাষের জন্য জমি ভালো করে আগাছা গুলোকে মুক্ত করে মাটিকে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে এবং মাটি যানো সমান থাকে এই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সাধারণত বেড চাষ পদ্ধতিতে ১-১.৫ মিটার চওড়া হয়। চারা রোপণ করার সময় ২-৩ হাত করে গ্যাপ রাখতে হবে। একটি বেড থেকে আরেকটি বেড এর গ্যাপ ৭৫ সে.মি. রাখতে হবে। মাদা তৈরি করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে মাদাই গাছের দূরত্ব যেন ৭ থেকে ১০ সেন্টিমিটার হয় এবং ফের গভীরতা যেন ৫০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে।
যারা পটল চাষ করেন তাদের তুমি জানা গেছে তো কান্ড এবং টিউবারের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে থাকে। তবে বপনের আগে পটল চারার শিকড়গুলো গজিয়ে নিলে বেশি ভালো হয়। এর কারণ দেখা শিকর গজিয়ে না নিলে মাটিতে আদ্রতা কম থাকলে শাখা কলমগুলো শুকিয়ে মারা যায়। খেয়াল রাখতে হবে পটল চাষের ক্ষেত্রে মাচা তৈরি কিন্তু অবশ্যক।কারণ মাচায় পটল চাষ করলে পটলের ভালো উৎপাদন বা ফলন পাওয়া যায়।
দেখা গেছে মাচা দেওয়ার ফলে পটল গাছের রোগবালায় এর আক্রমণ কম হয়। পটল কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদি একটি সবজি। এই পটল গাছের বৃদ্ধি ও ভালো ফলন পেতে অবশ্যই জৈব সার ও গোবর পরিমাণ মতো দিতে হবে। জেনে থাকা ভালো প্রতি ফসল সংগ্রহ করার পর জমিতে হেক্টর প্রতি ১৮ কেজি ইউরিয়া, ২৫ কেজি টিএসপি ও ১৪ কেজি এমপি স্যার প্রয়োগ করলে এরপর ফলন বেশি হবে।
এছাড়াও পরীক্ষা করে দেখা গেছে পটলের ফুল ধরা যদি কমে যায় তাহলে মাদা প্রতি ৫০০ গ্রাম গোবর, প্রোগ্রাম ইউরিয়া ১৭০, গ্রাম পিএসপি, ১৩০ গ্রাম এম ও পি, ২০ গ্রাম বোরণ ও ১৫০ গ্রাম জিপসাম স্যার দিলে ফলন ভালো হয়। খেয়াল রাখতে হবে পানির ঘাটতি হলে কিন্তু পটলের ফলন কমে যাবে। তাই যদি ভাল ফলন পেতে হয় তাহলে নিয়মিত দিতে হবে। আবার এক্ষেত্রে কিন্তু পটলের চারা অতিরিক্ত পানি ধারণ করতে পারে না তাই নিষ্কাশন এর ব্যবস্থাও রাখতে হবে।
পটলের ফলন বৃদ্ধির উপায়
অনেক সময় এমন দেখা গেছে যে পটল প্রথম দিকে ফলন অনেক বেশি দেয়। তবে আস্তে আস্তে ফলন কমে যায়। এক্ষেত্রে দেখা যায় আশেপাশে তৈরি হয় ওগুলো পরিষ্কার করলে এবং হালকা ভাবে মাটি কুপিয়ে মাদা প্রতি অতিরিক্ত ২০-৩০ গ্রাম ইউরিয়া, ৩০ থেকে ৩৫ গ্রাম টিএসপি, এবং ২০ থেকে ২৫ গ্রাম এমওপি স্যার প্রয়োগ করতে হবে তাহলে চারা গাছে নতুন নতুন ফুল ধরবে এবং ফলন অনেকটাই বেড়ে যাবে। এভাবে যদি গাছের পরিচর্যা করা হয় তাহলে ফলন অনেক বেশি পাওয়া যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে বা মাটি ভেদে সারের পরিমাণ কম বা বেশি হতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
পটল চাষের ক্ষেত্রে আমাদেরকে সবসময় মাথায় রাখতে হবে পটল কিন্তু আবহাওয়া তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে। সব জায়গায় পটল চাষ করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা হল। মাটি দো-আঁশ হতে হবে। যদি বেশি ফলন পেতে চান পটলের তাহলে মাচা তৈরি করতে হবে।
আমারে আর্টিকেলটি যদি আপনার উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। সবাই ভাল থাকবেন এবং দোয়া রাখবেন। নিয়মিত আমার ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন যদি আমার আর্টিকেলগুলো আপনার পছন্দ হয়ে থাকে
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url