জানুন টবে বেগুন চাষ পদ্ধতি কিভাবে সম্ভব এবং করণীয়
প্রিয় দর্শক টবে বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্ক হয়তো আপনি অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সঠিক তথ্যটি খুঁজে পাচ্ছেন না। তাহলে আপনার জন্য এই আর্টিকেলটি বেস্ট হবে যদি আপনি টবে বেগুন চাষ পদ্ধতি বিষয়ে জানতে চান। আজকে আমরা এ আর্টিকেল এর মাধ্যমে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। টবে বেগুন চাষের পদ্ধতি ও পরিচর্যা জানতে হলে আপনাকে মনোযোগ সহকারে সমস্ত আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো।
প্রিয়দর্শক এখানে আমরা আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করছি তার মধ্যে শীতকালে ও বর্ষাকালে বেগুন চাষের পদ্ধতি এবং টবে বেগুন চাষের পদ্ধতি উল্লেখযোগ্য। এইরকম আরো কিছু ইম্পর্টেন্ট তথ্যগুলো পেতে হলে আপনাকে মনোযোগ সহকারে সমস্ত আর্টিকেলটি পড়তে হবে।
ভূমিকা
বেগুন হলো একটি সবজি যা এশিয়া মহাদেশে বেশি চাষ হয়। এই সবজি টি বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহৃত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ধারণা করা হয় ভারত ও চীনে। বাংলাদেশেও এখন অনেক বেগুন উৎপন্ন হয়। শহরেও এখন টবে বেগুন চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে বেগুন চাষ হয় প্রায় সব মাটিতেই। তবে এটেঁল দো-আঁশ মাটি বা পলি দো-আঁম মাটিতে বেগুনের ফলন বেশি হয়। এবং বেগুন চাষের জন্য এই মাটি বেশি উপযোগী। এখন বেগুন চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।
বেগুন চাষের উপযুক্ত সময়
বেগুন চাষের জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো চারা উৎপাদন বা ভালো চারা খুজে বের করা। শীতকাল বা বর্ষাকালে সাধারণত বেগুন চাষ হয়ে থাকে। এবং এই সময় ২টি বেশি উপযুক্ত বেগুন চাষের জন্য। যদিও বাংলাদেশে সারা বছর বেগুন চাষ হয়।
শীতকালে ও বর্ষাকালে বেগুন চাষের পদ্ধতি
যদিও বাংলাদেশে সব সিজনে বেগুন চাষ হয় তবুও শীতকালের ও বর্ষাকালের বেগুন বেশি স্বাদ হয়। শীতকালে বেগুন চষের জন্য সময় থাকে শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত এবং বর্ষাকালে বেগুন চাষের জন্য সময় থাকে চৈত্র মাস পর্যন্ত। এই সময় বেগুনের চাহিদা ও থাকে অনেক বেশি। আবার অতি তাপমাত্রায় বেগুনের ফুল ও ফল নষ্ট হওয়ায় সাথে পোকার আক্রমণ দেখা যায়। তাই গ্রীষ্মকালে বেগুনের ফলন ভালো হয় না। এক্ষেত্রে টবে বেগুন চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করলে ভালো হয়।
টবে বেগুন চাষ পদ্ধতি
আধুনিক বিশ্বে এখন সবই সম্ভব তেমনই টবে বেগুন চাষ পদ্ধতি ও সম্ভব। বেগুন চাষ করা যেহেতু সহজ তাই এটি টবেও চাষ করা যাবে। টবে বেগুন চাষ করতে চাইলে প্রথমে টব সিলেক্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে টব এমন নিতে হবে যানো টবের নিচে কোনো ছিদ্র থাকে । এতে যদি বীজতলায় পানি জমে তাহলে দ্রুত বের হয়ে যাবে। চারা রোপন করার জন্য টবগুলোতে জৈবসার মিশ্রিত দো-আঁশ মাটি নিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ কোন জাতের মুরগি পালন বেশি লাভজনক
কোনো আগাছা থাকলে পরিষ্কার করে নিতে হবে। টবে গাছ লাগানো ক্ষেত্রে বিকালে লাগানো ভালো । এবং গাছটি যাতে বাকা না হয়ে যায় তাই গাছের গোড়ার মাটি উঁচু করে দিতে হবে। তবে গাছটি একটু বড় হলেই কোনো শক্ত লাঠি দিয়ে বেধে দিতে হবে। গাছটি লাগানোর পর প্রথম প্রথম পানি
বেগুন চাষের পদ্ধতি ও পরিচর্যা
আমাদের দেশে প্রায় ৫০ এর বেশি বেগুনের জাত রয়েছে। প্রায় প্রত্যেকের পছন্দের এই সবজি হওয়ায় দেশে সারাবছরই চাষ করা হয়। এই বেগুন চাষ দেশে সারাবছরই হয় এবং এতে লাভ ও বেশি। তবে বেগুন চাষের সঠিক পদ্ধতি জানা না থাকলে অনেক ক্ষতি হবে চাষিদের।
চাষ পদ্ধতিঃ বীজ বপন করার পর সেখান থেকে চারা হলে জমিতে চারা বপন করতে হয়।বীজ বপন করতে হয় সাধারণত একটি নির্ধারিত সময়ে। সময়গুলো হলো জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি, এপ্রিল, আগষ্ট- অক্টোবার। প্রথমে বীজ বপন করার জন্য মাটি অন্তত ২০ সেমি. চাষ করতে হবে। ৩ বর্গমি. বীজ বপন করতে চাইলে ২৫ গ্রাম বীজ লাগবে। অতএব এই হিসাব করে জমিতে বীজ বপন করতে হবে। যেখানে বীজ বপন করা হবে সেখানে মাটি উর্বর হতে হবে।
যদি সম্ভব না হয় তাহলে ওই মাটিতে কিছু পরিমাণ জৈব সার ও সামান্য পরিমাণ ফসফেট ব্যবহার করা যাবে। বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু ও ভাইরাস প্রতিরোধে ৫০ মেস নাইলন নেট দিয়ে চারা ঢেকে দিলে উৎপাদন ভালো হয়।৩৫-৪৫ দিনের মধ্যেই চারা রোপণের উপযোগী হয়ে যায়। এই সময় চারাতে ৫-৬ টি পাতা গজায়। এবং চারাটি প্রায় ১৫-১৬ সে.মি. লম্বা হয়। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো খেয়াল রাখতে হবে যানো চারা তোলার সময় শেকড় নষ্ট না হয়ে যায়।
এর জন্য চারা তোলার ১-২ ঘন্টা আগে চারাই পানি দিলে মাটি নরম হয়ে যায় এবং সহজেই সুন্দরভাবে চারাটি উঠে আসে। চারা তৈরি হওয়ার পর জমিতে ৭৫ সে.মি. দূরত্বে সারি সারি করে ৬০ সে.মি. দূরে লাগাতে হয়। বেগুন গাছের আকার অনুযায়ী এ দূরত্ব কম-বেশি করা যায়। গুনগত ও ভালো ফলন পেতে হলে অবশ্যই জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে।
তবে যেকোনো সার প্রয়োগ করা যাবে না। আগে মাটি পরিক্ষা করতে হবে তারপর ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে কৃষকদের থেকে জানা যায়, জৈব সার ব্যবহারে মাটির পরিবেশ ও গুনাগুন এবং চারা ভালো থাকে। জমিতে গোবর ব্যবহার ও পচাঁ আবর্জনা ব্যবহার করলে ভালো ফলন হয়।
আরও পড়ুনঃ শষা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
পরিচর্যাঃ শীতকালে ও বর্ষাকালের আগে লাগানো চারায় বেগুনের জন্য অনেক পানির প্রয়োজন হয়। আবার বর্ষাকালে জমিতে পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। জমিকে আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। গাছের বৃদ্ধির জন্য কয়েকদিন পর পর গাছের গোড়ার মাটি পরিবর্তন করতে হবে। মাটির ভিতরে শুকনো কোনো কচুরিপানা দিয়ে রাখলে মাটিতে রস অনেক দিন থাকবে।
যেকোনো গাছের বয়স বেশি হলে উৎপাদন ক্ষমতা কমে, এক্ষেত্রে গাছের প্রধান যে কান্ডটি রয়েছে তা গোড়ার দিক থেকে ২০-২২ সে.মি রেখে গাছের পুরো অংশ কেটে ফেলতে হবে। এরপর আগের নিয়মে সার ব্যবহার করলে ও সেচ দিলে কাটা অংশ থেকেই দ্রুত শাখা-প্রশাখা বের হয়ে ফল দেওয়া শুরু করবে।
বেগুন চাষের উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রতেকটি জিনিসেরই উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। তেমন বেগুনও ব্যতিত্রম নয়। বেগুন শব্দের ইংরেজী শব্দ এগপ্লান্ট। এগপ্লান্ট অর্থ ডিম আর ডিমের মতই বিভিন্ন পুষ্টি রয়েছে এই সবজিতে। মাছ রান্নাতে বা বিভিন্ন সবজির সাথে মিক্সড করে রান্না করলে তরকারি গুলো আরও সুস্বাদু হয়। যারা ডায়েট করে তারা নিয়মিত বেগুন খেলে ডায়বেটিকস নিয়ন্ত্রনে রাখে এবং বেগুনে রয়েছে অনেক পটাশিয়াম ও ফাইবার এবং ভিটামিন এ ও সি। বেগুনে যেহেতু ক্যাররির পরিমাণ কম সেহেতু এইটা ডায়েট চার্টে রাখা যায়। তবে যাদের এল্যার্জির সমস্যা আছে তাদের বেগুন না খাওয়ায় ভালো।
লেখক এর মন্তব্য
আপনারা বেগুন চাষের পদ্ধতি ও পরিচর্যা সম্পর্কে আমার আর্টিকেল থেকে জেনেছেন। এখানে অবশ্যই মাথায় রাখবেন বেগুন চাষের পদ্ধতি ও পরিচর্যা অত্যন্ত যত্ন সহকারে করতে হবে এবং সময় নিয়ে করতে হবে। এবং অবশ্যই মাথায় রাখবেন যেন চারা তোলার সময় সে কোন নষ্ট না হয়ে যায়। এ জন্য চারা তোলার এক থেকে দুই ঘণ্টা আগে চাড়ায় পানি দিলে মাটি নরম হয়ে যাবে সুন্দর ভাবে চারটি উঠে আসবে। এবং মাথায় রাখবেন জমিকে আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। সবাই ভাল থাকবেন এবং দোয়া রাখবেন নিয়মিত আমার ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন যদি আমার আর্টিকেলগুলো আপনার পছন্দ হয়ে থাকে।
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url